কেউ নিম্ন রক্তচাপে আক্রান্ত হলে কী করণীয়?

Spread the love

নিম্ন রক্তচাপে আক্রান্ত হলে প্রচুর পানি পান করুন এবং লবণসমৃদ্ধ খাবার খান। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিম্ন রক্তচাপ একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। আজকে আমরা কেউ নিম্ন রক্তচাপে আক্রান্ত হলে কী করণীয় এই বিষয়ে জানবো । 

এটি মাথা ঘোরা, দুর্বলতা ও ক্লান্তির মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। লবণসমৃদ্ধ খাবার খেলে সোডিয়াম বাড়ে, যা রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে।

চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব। এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখাও জরুরি। বিশেষ করে ফলমূল ও শাকসবজি খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি মেলে। তাই নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

Contents hide

 

নিম্ন রক্তচাপ কী

 

 

নিম্ন রক্তচাপ হল এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার নিচে থাকে। এটি শরীরে রক্ত প্রবাহ কমিয়ে দেয়, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে প্রভাবিত করতে পারে।

 

লক্ষণ

  • মাথা ঘোরা
  • ক্লান্তি
  • অবসাদ
  • অস্পষ্ট দৃষ্টি
  • বমি ভাব

 

কারণ

কারণবর্ণনা
পানিশূন্যতাশরীরে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে রক্তচাপ কমে যায়।
বেশি বিশ্রামঅনেক সময় শুয়ে থাকলে রক্তচাপ হ্রাস পায়।
রোগ বা সংক্রমণকিছু রোগ বা সংক্রমণ রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে।

 

নিম্ন রক্তচাপের ঝুঁকি

 

 

নিম্ন রক্তচাপ হলে নানা সমস্যা হতে পারে। এটি সঠিকভাবে চিকিৎসা না করলে বিভিন্ন শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। নিম্ন রক্তচাপ সাধারণত মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, এমনকি অজ্ঞান হওয়ার কারণ হতে পারে।

 

চিকিৎসা না করলে ক্ষতি

নিম্ন রক্তচাপের চিকিৎসা না করলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে হতে পারে:

  • হৃদপিণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
  • মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে
  • অঙ্গগুলিতে রক্ত প্রবাহ কমে গিয়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হতে পারে।

 

দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

দীর্ঘ সময় ধরে নিম্ন রক্তচাপ থাকলে বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হতে পারে। যেমন:

  1. কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে
  2. শরীরে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হতে পারে।
  3. প্রায়ই মাথা ঘোরা ও অজ্ঞান হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

 

প্রথমিক চিকিৎসা

 

রক্তচাপ কমে গেলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত নিম্ন রক্তচাপের কারণে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা বমির মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

 

আঘাত প্রতিরোধ

নিম্ন রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সহজেই আঘাত পেতে পারেন। তাই তাদেরকে সুরক্ষিত স্থানে রাখতে হবে।

  • বিছানায় শুয়ে রাখুন বা আরামদায়ক চেয়ারে বসান।
  • মাথা ও পা উঁচু করে রাখুন।
  • স্থিরভাবে বসার বা শোয়ার ব্যবস্থা করুন।

 

জল পান

  • প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস জল পান করুন।
  • গরম আবহাওয়ায় আরও বেশি জল পান করুন।
  • অল্প অল্প করে জল পান করুন।

নিম্ন রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। নিচের টেবিলের সাহায্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি মনে রাখুন:

পদক্ষেপবিবরণ
আঘাত প্রতিরোধশুয়ে বা আরামদায়ক চেয়ারে বসান। মাথা ও পা উঁচু রাখুন।
জল পানপ্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস জল পান করুন। গরম আবহাওয়ায় আরও বেশি।

 

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন

 

নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক। নিচে কিছু খাদ্যাভ্যাসের পরামর্শ দেওয়া হলো:

 

লবণাক্ত খাবার

নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় লবণাক্ত খাবার খুব কার্যকর। লবণ শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়ায়। সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়াতে সহায়ক। তাই প্রতিদিনের খাবারে লবণাক্ত খাবার যোগ করুন।

  • নুন যুক্ত বাদাম
  • লবণাক্ত বিস্কুট
  • তেলেভাজা খাবার

 

প্রচুর জল পান

নিম্ন রক্তচাপের ক্ষেত্রে প্রচুর জল পান করা আবশ্যক। জল শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। এতে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক।

  • প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস জল পান করুন
  • তাজা ফলের রস পান করুন
  • সুপ ও ব্রথ গ্রহণ করুন
খাবারউপকারিতা
লবণাক্ত বাদামসোডিয়ামের মাত্রা বাড়ায়
তাজা ফলের রসশরীরে জল সরবরাহ করে

 

জীবনযাপনের পরিবর্তন

 

নিম্ন রক্তচাপ বা হাইপোটেনশন একটি সাধারণ সমস্যা। সঠিক জীবনযাপনের পরিবর্তন করে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। জীবনযাপনের পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারি। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের বিষয় আলোচনা করা হলো।

 

ব্যায়াম

নিয়মিত ব্যায়াম নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি হৃদয়ের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। কিছু সাধারণ ব্যায়াম হলো:

  • হাঁটা
  • যোগব্যায়াম
  • সাঁতার

নিয়মিত ব্যায়াম করতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট সময় দিন। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।

 

কেউ নিম্ন রক্তচাপে আক্রান্ত হলে কী করণীয়?

 

মানসিক চাপ কমানো

 

নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মানসিক চাপ কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক চাপ কমাতে কিছু কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।

  1. মেডিটেশন
  2. গভীর শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ
  3. বই পড়া

প্রতিদিন কিছু সময় মানসিক চাপ কমানোর জন্য নির্ধারণ করুন। এটি মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

 

চিকিৎসকের পরামর্শ

 

নিম্ন রক্তচাপ একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক চিকিৎসা সময়মতো গ্রহণ করা উচিত। এতে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব।

 

যখন চিকিৎসা প্রয়োজন

নিম্ন রক্তচাপ হলে সবসময় চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। তবে কয়েকটি লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। যেমন:

  • গভীর মাথা ঘোরা
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
  • দুর্বলতা অনুভব করা
  • শ্বাসকষ্ট

এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 

চিকিৎসকের নির্দেশনা

চিকিৎসক নিম্ন রক্তচাপ নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষা করতে পারেন। যেমন:

পরীক্ষার নামবিবরণ
রক্ত পরীক্ষারক্তে লবণ ও হরমোনের মাত্রা যাচাই
ইসিজিহৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ পরিমাপ
ইকোকার্ডিওগ্রামহৃদযন্ত্রের গঠন ও কার্যকারিতা পরীক্ষা

 

পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসক ওষুধ বা জীবনযাপনের পরিবর্তন সুপারিশ করতে পারেন। যেমন:

  1. সঠিক খাদ্যাভ্যাস
  2. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান
  3. ওষুধ প্রয়োগ

চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চললে নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

 

বাড়িতে যত্ন

 

নিম্ন রক্তচাপে আক্রান্ত হলে বাড়িতে সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সঠিক যত্ন না নিলে শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি বর্ণনা করা হল যা বাড়িতে পালন করা যেতে পারে।

 

বিছানায় বিশ্রাম

নিম্ন রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিছানায় যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়া উচিত। বিশ্রামের সময় শরীর নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে পারে।

  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
  • অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকা উচিত।
  • বিছানায় শুয়ে সময়ে সময়ে শরীরের অবস্থান পরিবর্তন করা উচিত।

 

জলবাহী খাবার

নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে জলবাহী খাবার গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জলবাহী খাবার রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

খাবারের নামউপকারিতা
শরবতশরীর হাইড্রেটেড রাখে
সুপপুষ্টি সরবরাহ করে
ফলমূলের রসশক্তি প্রদান করে
  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।
  • লবণাক্ত খাবার খাওয়া যেতে পারে।
  • নিয়মিত ফলমূল খাওয়া উচিত।

 

নিম্ন রক্তচাপ এড়ানোর উপায়

 

নিম্ন রক্তচাপ এড়ানোর উপায় জানতে আমরা অনেক কৌশল অনুসরণ করতে পারি। সঠিক খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। নিম্ন রক্তচাপ এড়ানোর জন্য কিছু সহজ এবং কার্যকর উপায় নিচে আলোচনা করা হলো।

 

সঠিক খাদ্য গ্রহণ

নিম্ন রক্তচাপ এড়ানোর জন্য সঠিক খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের খাদ্যতালিকায় সঠিক পরিমাণে লবণ, পানি এবং প্রোটিন থাকা উচিত।

  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
  • লবণযুক্ত খাবার খান কিন্তু অতিরিক্ত নয়।
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন ডাল, মাংস এবং ডিম খান।
খাদ্যপরিমাণ
পানি৮-১০ গ্লাস
লবণ১ চা চামচ
প্রোটিন৭৫-১০০ গ্রাম

 

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

 

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিম্ন রক্তচাপ এড়ানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর। স্বাস্থ্য পরীক্ষা আমাদের শারীরিক অবস্থার সঠিক ধারণা দেয়।

  1. প্রতি ৬ মাসে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন।
  2. ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করুন।
  3. রক্তচাপ পরিমাপ যন্ত্র ব্যবহার করুন।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা আপনাকে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে সাহায্য করবে।

Frequently Asked Questions

 

নিম্ন রক্তচাপ কী?

নিম্ন রক্তচাপ হল যখন রক্ত প্রবাহের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে। এটি মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা অজ্ঞান হতে পারে।

 

নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণ কী কী?

নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণগুলির মধ্যে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব এবং দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হতে পারে।

 

নিম্ন রক্তচাপ হলে কী করবেন?

প্রথমে বসে বা শুয়ে বিশ্রাম নিন। প্রচুর পানি পান করুন এবং লবণযুক্ত খাবার খান। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

 

নিম্ন রক্তচাপ প্রতিরোধে কী খাওয়া উচিত?

নিম্ন রক্তচাপ প্রতিরোধে লবণযুক্ত খাবার, ফলমূল, সবজি এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়ও উপকারী হতে পারে।

 

Conclusion

নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় সচেতনতা ও সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। আপনার জীবনযাত্রার মান উন্নত করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন। নিম্ন রক্তচাপ মোকাবিলায় সচেতন থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।

 

Leave a Comment